আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে : শাহাদুজ্জামান

প্রকাশনী: ঐতিহ্য ; প্রথম প্রকাশ: ২০১৪ ; মুদ্রিত মূল্য: ১৪০

0

 

পৃথিবীর সব স্থল ডুবে গেছে কোন বিক্ষুদ্ধ জলোচ্ছ্বাসে। শুধু রাজার একরোখা প্রচেষ্টায় রক্ষা পেয়েছে ১০৯৮৮৪ বর্গ কিলোমিটারের এক ক্ষুদ্র দ্বীপ। কিন্তু সেই ঝড়, সেই জলোচ্ছ্বাস থামেনি। সময়ে সময়ে হয়ে উঠেছে আরও উগ্র, আরও বিক্ষুদ্ধ। নিজের মাতৃভূমির প্রতি কঠোর পরিশ্রম আর গভীর মমতায় রাজা আরও ১৫ টি বছর আগলে রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পিছনে রেখে যান আদর্শের যুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপান্তরের এক অসামান্য দৃষ্টান্ত। সেই দ্বীপটির নাম কিউবা। রাজার নাম কিংবদন্তী ফিদেল ক্যাস্ট্রো। আর সেই বিক্ষুদ্ধ ঝড় হলো সম্রাজ্যবাদ। যার প্রধান অভিভাবক কিউবা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরের দেশ সর্বোচ্চ শক্তিমান যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯১ সাল। তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল সমাজতন্ত্রের স্বপ্নঘর সোভিয়েত ইউনিয়ন। জন্ম নিল একের পর এক রাষ্ট্র। লেনিনের অক্টোবর বিপ্লব পৃথিবীকে শোষণমুক্তির যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল আয়ু পেল মাত্র ৮৪ বছর। কিন্তু সমাজতন্ত্রের শরীর অর্থব হলেও প্রাণটুকু আজও যেন ধুকে ধুকে বেঁচে আছে কিউবায়। সেই কিউবা প্রাণশক্তির রহস্য নিয়ে শাহাদুজ্জামান লিখেছেন তাঁর ডকু ফিকশন আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে। যেখানে বাংলাদেশের এক স্বপ্নবাজ তরুণ হাজির হয় ক্যাস্ট্রোর কাছে। ক্যাস্ট্রোও যেন অনেকদিন পর কারও সাথে কথা বলতে পেরে উচ্ছ্বসিত হন। বলে যেতে থাকেন একের পর এক শৈশব থেকে সংগ্রামের জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর কথা। কিউবা ছিল সত্যিকার অর্থে ক্যাস্ট্রোর মাতৃভূমি। ১৫৯২ সালে কলম্বাসের হাজার কিউবার বেলাভূমির স্পর্শ করার খুব অল্প সময়ের মাঝেই কিউবার তায়নো এবং সিবানো আদিবাসীগোষ্ঠীকে জাতিগত নির্মূল করা হয়। অস্ত্র এবং ব্যাধি নিয়ে। সেই আদিবাসীগোষ্ঠীর বেঁচে যাওয়া গুটিকয়েক ব্যক্তিদের বংশধর ছিলেন ক্যাস্ট্রোর মা। তাই ক্যাস্ট্রোর শৈশব থেকেই মাতৃভূমিকে দেখেছেন, অনুভব করেছেন, ভিন্নচোখে। ক্যাস্ট্রোর কাছে বিপ্লবের প্রথম এবং প্রধান আদর্শ ছিলেন হোসে মার্তি। যিনি স্পেনিয়ার্ড দখলকারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে কিউবার প্রথম শহীদ নেতৃত্বদানকারী। মার্তির মৃত্যুর ৭ বছর পর কিউবা থেকে স্পেনের দখলমুক্ত হয়। পায় নতুন মনিব, যুক্তরাষ্ট্র। পুতুল সরকার বসিয়ে প্রতিনিয়ত দাস কিউবাকে শোষণ করায় নতুন মনিব যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো সাবেক স্পেনকেও। উল্লেখ্য, পঞ্চাশ দশকে কিউবার আখ খামারের ৪০ ভাগ ছিল আমেরিকার কোম্পানির অধীনে, যে খনিজ ছিল তার ৯০ ভাগও ছিল ওদের হাতে। দেশটির ৮০ ভাগ তেলও নিয়ন্ত্রণ করতো আমেরিকান স্বত্বাধিকারী। এসব কিছু ক্যাস্ট্রোর পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন তুলনামূলক সূক্ষ্মতরভাবে। কারণ সমাজের পুঁজিবাদীদের একজন ছিলেন স্বয়ং ক্যাস্ট্রোর স্প্যানিশ বাবা। আদর্শের হাতেখড়ির দিনগুলোতে ক্যাস্ট্রোকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিলো চিবাসের আত্মহত্যা। ক্যাস্ট্রোর পাশে বসেই কিউবান পিপল পার্টির নেতা এডুয়ার্দো চিবাস নিজের মাথায় পিস্তল ধরে গুলি করেন। ক্যাস্ট্রোর চিবাসের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তবে পরে পেরেছিলেন সমগ্র কিউবার জন্য। মাত্র ১২০ জন নিয়ে গিয়েছিলেন প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে। ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বার সেই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৮৬। আর প্রতিবার ক্যাস্ট্রো আর যোদ্ধাদের যেন মায়ের মত আগলে রেখেছিল সিয়েরা মিয়েস্ত্রো পাহাড়। চূড়ান্ত যুদ্ধে মাত্র ৩০০ গেরিলা দিয়ে রুখে দিয়েছিলেন ৮০ হাজার সৈন্যের বিশাল বিগ্রেড। ফিদেল ক্যাস্ট্রো এক বিশাল সমুদ্রের নাম। যেন তাঁর উপরে ভেসে ছিল এবং আছে কিউবা নামের দ্বীপটি। মাত্র ৭০ পৃষ্ঠায় সেই সমুদ্রকে তুলে ধরা যায় না। তবে লেখক নিঃসন্দেহে তুলে এনেছেন সময়ের সেরা বিন্দুগুলোকে। এই সমুদ্রের আরও গভীরে যারা গুপ্তধনের অভিযানে যেতে চান তাঁদের জন্য বইটি হতে পারে একটি মানচিত্র।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না