আমরা অনেকেই সুন্দরী মেয়ে দেখলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি, আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুকে বলি, “দোস্ত আমি না ঐ মেয়েটির ওপর ক্রাশ খেয়েছি।” ‘ক্রাশ’ খাওয়ার মানেটা হলো মেয়েটার রূপ দেখে আত্মহারা হয়ে পড়া। কল্পনার জগতকে শুধু সেই মেয়েটিরই পদচারণে মুখরিত করে তোলা। নিজেকে সম্রাট শাহজাহান আর মেয়েটিকে মমতাজ ভাবতে শুরু করা। ক্লাস চলাকালীন সময়ে তাকে একনজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়া। সকাল সন্ধ্যা তাকে নিয়ে ভাবভাবতে সময়ের সবটুকু খরচ করে ফেলা। ধর্মীয় অর্থে না বললেও কবিগুরু ঠিকই বলেছিলেন,
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ”
কবিগুরুর সাথে অদ্য আলোচনার পার্থক্যটা হলো, কোন নারীর চোখে আমার সর্বনাশ না দেখলেও, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নারীর চোখের দিকে তাকানোটা আমার সর্বনাশের অন্যতম কারণ। দোষটা তাই নারীর চোখে না; আমার চোখে, আমার চিন্তায়, মনে–মননে। পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা বলছেন, “হে আমার প্রিয় হাবিব, আপনি (পুরুষ) মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে।”১ আর এই ‘ক্রাশ’ নামক থিউরিকেই আল্লাহ’র হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যিনা’ বলেছেন২।
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো বেগানা নারীর দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকানোর কোন অধিকারই আমার নেই। আমার সংবিধানই (আল কুরআন) আমাকে এই কাজের ব্যাপারে শক্তভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। আবার রাসূলে পাক বলেছেন, “কোন নারীর দিকে যদি দৃষ্টি চলে যায় তাহলে তা সাথে সাথে ফিরিয়ে নাও। ভুলেও দ্বিতীয় বার যেন মুখ তুলে না তাকাও।”৩ কেননা, শয়তান চায় দ্বিতীয়বার তাকানোর মধ্য দিয়ে যে-কোন ধরনের পাপকাজে আমাদেরকে শামিল করতে। লক্ষ করুন, এই যে একজন মহিলার দিকে বারংবার তাকানো,এটাকে আল্লাহ তায়ালা চোখের খিয়ানত বলেছেন। জেনে থাকা আবশ্যক যে, চোখ হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার পক্ষ হতে আমানত; যদি সেই আমানত দিয়ে ভুল কিছু দেখি তা হবে খিয়ানত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা সে (বিচার দিবসে) দেখতে পাবে। আবার কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে।৪
এই ক্রাশ নামক রোগ থেকে বাঁচার একটাই উপায়, তা হলো তাওবা করা। আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাওয়া, আশ্রয় এবং সুরক্ষার ভিক্ষা চাওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন, “আল্লাহ’র অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।”৫ আরেকস্থানে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আল্লাহ যার ইচ্ছা তাওবা কবুল করবেন এবং আল্লাহ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময়।”৬ তাই সময় থাকতে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। তাওবা করে কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমাভিক্ষা চাইতেই হবে। আর যারা ফিরে আসবে তাদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সুসংবাদ প্রদান করে বলেন, “তাদের রব তাদেরকে সুসংবাদ শুনাচ্ছেন নিজ দয়া ও আপন সন্তুষ্টির এবং ওই সব বাগানের (জান্নাত), যেগুলোর মধ্যে তাদের জন্য স্থায়ী নিয়ামত রয়েছে।”৭
সুতরাং, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে চোখকে এবং সেই সাথে সমাজকে সুরক্ষা প্রদান করার তাওফিক দান করুন। তাঁর বারগাহে ইলাহিতে সকাল-সন্ধ্যা, ফরজ, নফল, তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে যেন তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এবং নিজের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দেন। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন এবং বিগত সময়ের পাপ মোচন করে সরল, সঠিক পথে নিজকে চালানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র:
(১) সূরা নুর : ৩০
(২) সুনানে আবু দাউদ : ২১৫১
(৩) সহিহ বুখারী: ৬২৪৩, ৬৬১২; সহিহ মুসলিম : ২৬৫৭
(৪) সূরা যিলযাল : ৭-৮
(৫) সুরা যুমার : ৫৩
(৬) সূরা তাওবা : ১৫
(৭) সূরা তাওবা : ২১
