ভাষা ও ধর্মের মিথস্ক্রিয়া : ধর্মের ভাষা এবং ভাষার ধর্ম 

2

 

‘আমি যখনই কোন রাসূল পাঠিয়েছি, তাকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের সামনে সত্যকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে।’

(আল-কোরান-১৪:৪)

 

১.

আধুনিক মাগরেবি ফালাসিফার পুরোধা পুরুষ ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪)। জার্মান এই দার্শনিকের নন্দিত কিতাব ‘দ্য ক্রিটিক অব পিওর রিজন’ প্রকাশিত হয় ১৭৮১ সালে। যার শুরুই করেছেন তিনি দুই ধরণের বক্তব্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। এনালাইটিক এবং সিন্থেটিক জাজমেন্ট। এনালাইটিক জাজমেন্ট বলতে এমন বক্তব্য বিবেচ্য, যার উদ্দেশ্যের মধ্যেই বিধেয়ের অর্থ নিহিত। ‘চতুর্ভুজের চারটি বাহু আছে’ এমন একটি বাক্য। কারণ ‘চতুর্ভুজ’ নামের মধ্যেই নিহিত চারটি বাহুর ধারণা। চতুর্ভুজ তাকেই বলে, যার বাহু সংখ্যা চার। অর্থাৎ এই ধরণের বাক্যে বিধেয় নতুন কোন তথ্য যোগ করেনি। ফলে বাক্যকে সত্য সাব্যস্ত করতে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে সিন্থেটিক জাজমেন্ট হলো এমন বাক্য, যার বিধেয় নতুন তথ্য যোগ করে। ‘কবুতরটির ডানা ভেঙে গেছে’ বাক্যটি তার উদাহরণ। যেখানে কবুতরটির ডানা আসলেই ভাঙা কিনা, তা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা দিয়েই নির্ধারণ করা হয়।

যখন ধর্মের পরিভাষায় কথা বলা হয়; তখন আসলে কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে? আল্লাহ সর্বশক্তিমান কিংবা আত্মা অস্তিত্বশীল কিংবা আখেরাত বিষয়ক নানা প্রশ্নগুলো? এখানেই আপত্তি লজিক্যাল পজিটিভিস্টদের। বিশেষ করে ইংরেজ দার্শনিক এ জে এয়ার (১৯১০-১৯৮৯)। কান্ট থেকে প্রভাবিত ছিলেন তিনি; ছিলেন ভিয়েনা সার্কেল থেকেও। বলে নেয়া ভালো, ভিয়েনা সার্কেল হলো ১৯২০-এর দশকে ভিয়েনার একগুচ্ছ দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ; যারা বুদ্ধিবৃত্তিক নয়া আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। সেই আন্দোলন পরিচিত লজিক্যাল পজিটিভিজম বা লজিক্যাল এমপিরিসিজম বা ইউনিটি অব সায়েন্স আন্দোলন নামে।

 

কোন বাক্য অর্থপূর্ণ হবার মানে তা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সত্য বা মিথ্যা হওয়া। আর কোন বাক্য অর্থহীন হওয়া মানে সত্য বা মিথ্যা না হওয়া। এ জে এয়ার মনে করেন, কোন বাক্য অর্থপূর্ণ হবে, প্রথমত যদি তা এনালাইটিক স্টেটমেন্ট হয়। অর্থাৎ সংজ্ঞাগতভাবেই সত্য হয়। দ্বিতীয়ত, যদি সিন্থেটিক স্টেটমেন্ট হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি তার ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে তার সত্য বা মিথ্যা যাচাই করে নিতে পারে। এই দুই মানদণ্ডের কোনটিতে উত্তীর্ণ না হলে সেই বাক্য অর্থহীন। দার্শনিক পরিভাষায় এর নাম ভ্যারিফিকেশন প্রিন্সিপল। ‘বৃষ্টি হচ্ছে’ কথাটি অর্থপূর্ণ এবং ‘পঙচাঙা কদামিরু’ কথাটুকু অর্থহীন। কারণ প্রথমটাকে যাচাই করা যায়; দ্বিতীয়টি যায় না। সেই হিসাবে আল্লাহ, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম এবং আত্মা বিষয়ক সমস্ত বক্তব্য মূলত এই মানদণ্ডের বাইরে। সেগুলো এনালাইটিকও না; আবার তাদের সত্য হওয়া বা মিথ্যা হওয়া যাচাই করা যায় না; অর্থাৎ অর্থহীন। একইভাবে ‘আল্লাহ আছেন’ বক্তব্যটি যতোটা অর্থহীন; ‘আল্লাহ নেই’ বক্তব্যটিও ঠিক ততোটাই অর্থহীন। কারণ সেটাও যাচাইযোগ্য না। কিন্তু ভ্যারিফিকেশন প্রিন্সিপলের সবচাইতে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এই তত্ত্ব নিজেই নিজের স্কেলে উত্তীর্ণ না। অর্থাৎ তত্ত্বটি না এনালাইটিক, না সিন্থেটিক। অর্থাৎ তত্ত্ব নিজেই নিজের চোখে অর্থহীন।

 

সেই সূত্র ধরেই ধর্মের ভাষা নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্ত হয়েছে নানা মুনির নানা মত। জন হিক, কার্ল পপার, এন্টনি ফ্লিউ, আর এম হেয়ার, পল টিলিক, ভিনসেন্ট ব্রামার, বাসিল মিচেল, আর বি ব্রেইথওয়েট কিংবা সিএস লুইস। ধর্মের ভাষাকে কীভাবে নেয়া যায়; কীভাবে নেয়া উচিত। সাধারণ গদ্যের মতো, বৈজ্ঞানিক মতবাদের মতো, কবিতার মতো, রূপকের মতো নাকি অন্য কোন উপায়ে?

 

এই প্রশ্নে যাবার আগে আরেকটা ব্যাপার ফায়সালা করে আসা উচিত। ধর্ম আদতে কী? স্যাক্রেড এবং প্রোফেনের ধারণার সাথে কিছু আচার অনুষ্ঠানের সমষ্টি? হতে পারে। তবে তার চাইতে বড় সত্য হলো, একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। যা মানুষকে তার সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়। শোনাতে চায় অসীমতার গল্প। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের বর্ণনা বস্তুত মৃত্যু পূর্ববর্তী জীবনের ক্ষুদ্রতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চায়। বস্তুজগতের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকেই যেন অতিক্রম করতে চায় ধর্ম। মহাবিশ্বে উপেক্ষা করার মতো একটা গ্রহে বসবাস করা উপেক্ষা করার মতো একটা প্রাণকে শোনায় অমরত্বের গান। যেন সে সাধারণ কেউ না। বেহেশত থেকে এসেছে, বেহেশতে ফিরে যাবার জন্য। ধর্মই নির্ধারণ করে দেয় ব্যক্তির জীবন সম্পর্কিত ধারণা, নৈতিকতাবোধ, সামাজিক ও পারিবারিক আচরণ এমনকি কথাবার্তার মাপকাঠিও। যুক্তির স্কেলে, বুদ্ধির স্কেলে, বিজ্ঞানের স্কেলে অকৃতকার্য হবার ভয় ধর্মের নেই। তার নিজস্ব নকশা রয়েছে চিন্তার।

 

ফলে একই ভাষাতে থেকেও ধর্মের ভাষায় আলাদা লেয়ার তৈরি হয়। এই ভাষা গদ্য বা পদ্যের মতো না। গরুটি শক্তিমান কিংবা কুস্তিগীরটি শক্তিমান বক্তব্যের সাথে আল্লাহ শক্তিমান ধারণার রাতদিন তফাত। একইভাবে সাপে ভয় আর বাঘে ভয়ের সাথে আল্লাহর ভয় ধারণায় মিলের চেয়ে অমিল বেশি। মানুষের ভালোবাসা এবং প্রাণীর ভালোবাসার সাথে আল্লাহর ভালোবাসাতেও পার্থক্য ঢের। ‘শক্তিমান’, ‘ভয়’ এবং ‘ভালোবাসা’ অভিধানে যে অর্থেই থাকুক; এখানে তাদের অর্থ নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে। ধর্মের এই দ্যোতনা বিশ্বাসী মাত্রই অনুধাবন করতে পারে। বাইবেলে স্রষ্টাকে পিতা হিসাবে প্যারাবল টানলেই স্রষ্টা পিতা হয়ে উঠেন না। এমন কিছু হিসাবে আবির্ভূত হন; যা জন্মদাতা পিতাকেও ছাপিয়ে যায়। ভিটগেনস্টেইন হয়তো এদিকে ইশারা করেই বলেন, Meaning is use। একটা সময় ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁপোকা; তবু ক্রিকেট বললে প্রথমে কি পোকার কথা মাথায় আসে নাকি কোন খেলা? মাউস বলতে কি প্রথমেই ইঁদুর বুঝি নাকি কম্পিউটারের পাশে ছোট্ট যন্ত্রটা? অর্থের এই পরিবর্তন ব্যবহারের মাধ্যমেই ঘটেছে। শব্দ ভিন্ন প্যারাডাইমে প্রবেশের সাথে সাথে বদলে ফেলেছে অর্থের পোশাক। শব্দের ভেতর অর্থ যে গতিশীল, এটা বুঝতে না পারলে শব্দ মূলত প্রাণহীন মূর্তি হয়ে উঠে। তা একত্ববাদের কথাই বলুক কিংবা বহুত্ববাদের।

ধর্মকে উপেক্ষা করা চোখে জগত পাঠের ব্যকরণের থেকে অনেক দিক দিয়েই ধার্মিকের ব্যকরণ ভিন্ন। ফলে ভিন্ন প্যারাডাইমে যখন শব্দগুলো প্রবেশ করে, তখন তাদের অর্থের বদল ঘটে। মৃত্যু একটা সাদামাটা শব্দ মাত্র মনে হলেও প্যারাডাইম ভেদে তার মাত্রা আলাদা। একটা ধর্ম থেকে আরেকটা ধর্মে প্রবেশ করলেও একই শব্দ ভিন্ন অর্থ পায়। আত্মা একটা ধর্মে এক রকম তাৎপর্য আবার অন্য ধর্মে ভিন্ন তাৎপর্য নিয়ে আসতে পারে। ইব্রাহিমি ধর্মে সময়ের ধারণা আর ভারতীয় ধর্মে সময়ের ধারণা এক না। তার চাইতে স্পষ্ট উদাহরণ আইয়ামে জাহেলিয়ার দিনগুলোতেও মানুষের মনে ‘আল্লাহ’ উপাস্য উপস্থিত ছিলো। ইসলামের দিনগুলোতে মানুষের মনে থেকেছে ‘আল্লাহ’ উপাস্য। নাম অপরিবর্তিত থাকলেও পার্থক্য বহুত।

 

২.

ধর্মের কাছে গেলে ভাষা নতুন মাত্রা পায়। তাহলে ভাষা কিভাবে ধর্মকে শক্তি দেয়? খুব সোজা জবাব। ধর্মকে ভাষার বিস্তৃত প্যারাডাইমে প্রবেশ করানোর প্রচেষ্টা। যথাসম্ভব ভাষার সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনা। অবশ্যই ভিন্ন প্যারাডাইমে ভাষা নতুন মাত্রা নেবে। সেই ভিন্নতা টিকে থাকবে কিনা, তা নিশ্চিত না। যেমন, ধরা যাক পাঁচজন বন্ধু মিলে একটা তালগাছকে আমগাছ বলতে শুরু করলো। এই পাঁচজনের সার্কেলে তালগাছ অর্থের ভিন্ন একটা মাত্রা লাভ করেছে, আমগাছ হিসাবে। কিন্তু এই ভিন্নতা টিকবে ক’দিন? পাঁচজনের কেউ মারা যাবে, কেউ ভুলে যাবে, কেউ এসব নিয়ে মাথাই ঘামাবে না পরবর্তীতে। একদিন মৃত্যু ঘটবে এই নতুন মাত্রার। এভাবেই ভাষার মৃত্যু ঘটে। অর্থের মৃত্যু ঘটে। গোপন জ্ঞানের মৃত্যু ঘটে। এমনকি মৃত্যু ঘটে ধর্মেরও। অর্থাৎ ধর্মকেও বেঁচে থাকতে হলে সাধারণ মানুষের গভীরে প্রবেশ করার মতো শক্তি রাখতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ধার্মিকদের প্রবণতাই থাকে ধর্মকে কতিপয়ের কাছে সীমাবদ্ধ করে ফেলার। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির ভুরি ভুরি।

 

সূরা হামিম আস সিজদার ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি যদি আজমি (আরবি ব্যতীত অন্য যে কোন ভাষা) ভাষায় কোরান অবতীর্ণ করতাম, তারা অবশ্যই বলতো; এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, এর ভাষা আজমি অথচ রাসুল আরবীয়।’ কোরানের এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় ধোঁয়াশা। অবশ্যই ধর্মকে শ্রোতার কাছে বোধ্য অবস্থায় হাজির করতে হবে। বক্তব্যকে শ্রোতার সামনে স্পষ্ট করার দায় বক্তারই। ফলে ভাষা ও অর্থের দেয়াল বক্তাকেই আগে বুঝে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করতে হলে তার হৃদয়কেই স্পর্শ করতে হবে। আর মানুষ তার নিজের ভাষা, নিজের চয়নরীতিতেই হৃদয়কে মেলে ধরতে পছন্দ করে। অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের অভিব্যক্তি সবচাইতে সুন্দর প্রকাশ করা যায় নিজের ভাষাতেই।

 

অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বক্তার অর্থ এবং শ্রোতার অর্থ। সত্যিকার বক্তব্যে শ্রোতার অর্থের কাছাকাছি থাকেন বক্তা। নিজ জ্ঞানের উচ্চতম অবস্থা থেকে নিচে নেমে এসে শ্রোতার লেয়ারে দাঁড়িয়ে কথা বলেন।

আল্লাহ ভাষার প্রতি মুখাপেক্ষী না; তাহলে কোরানকে ভাষায় নাযিল করা হলো কেন? মানুষের প্রয়োজনেই। আরবিতে নাজিল হবার কারণও মানুষের প্রয়োজনই। ফলে কোরান আল্লাহর জ্ঞানের মাপকাঠি না; মাপকাঠি মানুষের জ্ঞানের।

ধর্মের কথা বলার সময় যারা আভিজাত্য বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য মোক্ষম জবাব হলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মশা কিংবা তার চেয়েও ছোট কিছুর উপমা দিতে লজ্জাবোধ করেন না’। (কোরান-২:২৬)

 

খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের কথা। ভারতীয় অভিজাতরা তখন সংস্কৃত ভাষাতেই মনোযোগী। ব্রাহ্মণ পুরোহিত এবং ক্ষত্রিয় শাসক শ্রেণির সমন্বয়ে এক অভেদ্য বলয়। বেদের ভাষা সংস্কৃত কিংবা দেবতাদের ভাষা সংস্কৃত বলে সংস্কৃতকে পবিত্র গণ্য করা হতো। এই অব্দি ঠিক ছিলো। কিন্তু সংস্কৃত ভিন্ন অন্য ইতর ভাষায় বেদমন্ত্র পাঠ, পুজা অর্চনার নিষিদ্ধ করা; পাঠের জন্য রৌরব নরক বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে আধ্যাত্মিকতাকে কতিপয়ের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা হলো। ঈশ্বর আবদ্ধ হলেন কতিপয়ের খিল আটা দরজার ভেতরে। ইতর জাতের মতো ইতর ভাষাও হলো অস্পৃশ্য। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিলো গৌতম বুদ্ধের। তিনি কেবল ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করলেন না; করলেন জনবিচ্ছিন্ন ভাষা সংস্কৃতকেও। নিজের বাণী প্রচার করলেন পালি ভাষায়। তৎকালীন মগধ এবং বর্তমান বিহারের স্থানীয় মানুষের প্রাত্যহিক ব্যবহৃত ভাষা ছিলো পালি। ফলে বৌদ্ধধর্মের শুরুই হলো গণমানুষের ভাষাকে সাথে নিয়ে। খুব দ্রুত এই ধর্মের প্রসারের পেছনে একটা অনুঘটক এটাও।

 

প্রথমদিকে পালি ভাষার চর্চা থাকলেও কয়েক শতক পরেই খোদ বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরাই পালি ভাষা ত্যাগ করতে থাকেন। বুদ্ধের প্রজ্ঞা হয়তো অবচেতনেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তারা। বৌদ্ধধর্মমতকে সমৃদ্ধকরণে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মূল্যবান দার্শনিক মতামত জমেছে। নানা সমস্যার সমাধান এসেছে। প্রতিপক্ষের অভিযোগ খণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু ক্রমে পালি ছেড়ে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সংস্কৃততে। অর্থাৎ মানুষের মুখের ভাষার সাথে দূরত্ব জন্ম হতে থাকে। নিয়তির পরিহাস। যার বিরোধিতা করতে করতে তাদের মঞ্চে আগমন; তাদের মতোই কতিপয়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়লো বুদ্ধের জীবনদর্শন।

 

খ্রিষ্টধর্মের সাথে ভাষার ইতিহাস আরো রক্তক্ষয়ী। বাইবেল তখন চার্চ এবং চার্চের প্রতিনিধিদের কবজায়। যেকোন ইংরেজের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো খোদা ল্যাটিন ভাষায় কথা বলে। যদিও ল্যাটিন বাইবেলের আদি ভাষা না। বাইবেলের আদি ভাষা হিব্রু। পারস্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির যুগে অনূদিত হয় আরামায়িক ভাষায়। যা সেই সময়ে ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরের মানুষের সাধারণ ভাষা ছিলো। গ্রিক ভাষায় বাইবেল প্রথম অনুবাদ করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের দিকে। রোমান সাম্রাজ্য যখন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে; তখন বাইবেল ল্যাটিন ভাষায় প্রবেশ করে। চার্চের ভাষা ল্যাটিন, চার্চ মনোনীত অনুবাদ ছিলো সেইন্ট জেরোম (৩৪৭-৪২০ খ্রিষ্টাব্দ)-এর ল্যাটিন অনুবাদ। মানুষ যতো উচ্চ শিক্ষিতই হোক; ল্যাটিন ভিন্ন অন্য কোন ভাষায়, বিশেষ করে ইংরেজির মতো নিচু শ্রেণির ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা ধর্মদ্রোহীতার শামিল। ফলে ধর্মবোধ টিকে থাকতো জনমানস থেকে বিচ্ছিন্নভাবে।

 

দেয়ালে প্রথম ধাক্কা দেন জন ওয়াইক্লিফ (১৩২৮-১৩৮৪)। গণমানুষের কাছে দুর্বোধ্য ল্যাটিন থেকে তিনি স্থানীয় ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেন বাইবেলের। মারা যান ১৩৮৪ সালে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই। তারপরও চার্চের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পাননি বেচারা। ১৪২৭ সালে তার হাড়-অস্থি কবর থেকে তুলে জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয় পোপ মার্টিনের আদেশে। ১৪১৫ সালে ঠিক একই দোষে অর্থাৎ স্থানীয় ভাষায় বাইবেল অনুবাদের অপরাধে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় চেক ধর্মযাজক ইয়ান হুসকে। একই প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন অক্সফোর্ডের তৎকালীন পণ্ডিত উইলিয়াম টিনডেল। পরিণামে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন যাযাবরের মতো। শেষ রক্ষা হয়নি; পুড়েই মারা যান টিনডেল অকালে। কিন্তু সেই অনূদিত বাইবেল হয় সবচেয়ে জনপ্রিয় বই। এমনকি শেক্সপিয়ারের চাইতেও সুপরিচিত। তার হাত ধরে যেন জেসাস ইংরেজ রাখাল ছেলের সাথে ইংরেজিতে কথা বলছেন। মোজেসের মাধ্যমে ইংরেজিতে আসছে টেন কমান্ডমেন্ট। ধর্মীয় শ্রেণিকরণে এই ধাক্কা পরবর্তীতে পাটাতন প্রস্তুত করে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের। উত্থান ঘটে জার্মানিতে মার্টিন লুথার, ফ্রান্সে জন ক্যালভিন এবং সুইজারল্যান্ডে হালড্রিচ জিংলির।

 

প্রসঙ্গক্রমে আবার ভারতে ফিরে আসা যাক। ভারতে বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্ম তখন দর্শনসর্বস্বে পরিণত হয়েছে। মন্দিরের চত্বর আর ধর্মশিক্ষার পীঠস্থান যেন কঠিন তত্ত্ব ও তর্কেই মগ্ন। ইসলামের আগমন এখানকার মাটিতে নতুন প্রাণ দিলো। বিশেষ করে সুফিদের সংস্পর্শ হয়ে উঠলো মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অংশই। সিলেটের জমিনে শাহজালাল রহ. কিংবা উত্তর ভারতের খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া। প্রায় কাছাকাছি সময়ে উত্থান ঘটে ভক্তি আন্দোলনের। চৈতন্য এবং নিত্যানন্দের নেতৃত্বে ভক্তরা যেন বাংলায় সুফিবাদ বিস্তারের সাথে কিছুটা হলেও টিকতে পেরেছিলো। সুফি আর ভক্তদের একটা সাদৃশ্য ছিলো, স্রষ্টার প্রতি ভক্তি আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তাতে দার্শনিক কোন তর্ক নেই। বাংলা ভূমিতে অধিকাংশ পীরদের জলসা বাংলা মাসের পঞ্জিকা মেনে হয়। বৈষ্ণববাদের সাথে সংস্কৃতের চাইতে বাংলা ভাষার সম্পৃক্ততা বেশি। উভয়ই মূলত বাংলার মানুষের সাথে ধর্মবোধের মোয়ামেলার ইতিহাস। শিখধর্ম কীভাবে পাঞ্জাবি জনগনের প্রাণের ধর্ম হয়ে উঠলো, তার শিকড়ও এখানেই। স্থানীয় জনগনের প্রাণকে স্পর্শ করতে পারার ক্ষমতা।

 

ইসলাম জন্মের পর থেকেই এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে চেয়েছে বারবার। সাহাবি সালমান ফারসি রা. ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি সূরা ফাতিহাকে ফারসিতে অনুবাদ করেন। সামানীয় শাসক মানসুর (৯৬১-৭৬) দশম শতকেই কয়েকজন অনুবাদককে নির্দেশ দেন তাফসিরে তাবারির ফারসি অনুবাদের জন্য। একাদশ শতকে খাজা আবদুল্লাহ আনসারির ছাত্র ফারসিতে রচনা করেন কোরানের তাফসির। খোদ আরবি ভাষার ভেতরেই নানারকম ব্যাখ্যা তো কোরানের ছিলোই। ইসলামে ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অর্থ অনুধাবনের প্রয়োজনেই। ফলে কোরান পাঠ বলতে অর্থ বুঝে কোরান পাঠকেই ইশারা করেন পণ্ডিতগণ। তবুও দুর্ভাগ্যক্রমে মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কোরান অনুবাদের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছিল সেই অসুখ। কোরানের ভাষা কেন কাফের ভাষা বাংলায় আসবে; তা নিয়ে হীনম্মন্যতার কমতি ছিলো না। শাহ মুহম্মদ সগীর, সৈয়দ সুলতান এবং আবদুল হাকিমদের মতো যারাই ধর্মীয় কিতাবাদি অনুবাদ করতে এগিয়ে আসতে চেয়েছেন; শুনেছেন কঠোর কঠিন ফতোয়া। মধ্যযুগের মুসলিম কবিরা আরবি এবং ফারসি অনেক কিতাবই অনুবাদ করেছেন। প্লট নিয়ে সৃষ্টি করেছেন নতুন আবহে। কিন্তু কোরান অনুবাদের মতো ভারী কাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৮৮১ সাল অব্দি। ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী গিরীশচন্দ্র সেনের হাতে। তারপর মাওলানা নাইম উদ্দীনের দ্বারা ১৮৮৭ সালের কোরান অনুবাদ মূলত প্রতিক্রিয়া। মুসলিম সমাজে যে দ্বিধা কাটতে সময় লাগে আরো।

 

৩.

ধর্মের সংস্পর্শে এলে ভাষা নতুন প্রাণ লাভ করে। একইভাবে ধর্মকে দীর্ঘজীবী হবার জন্য সঠিক ভাষাকে বুঝে নিয়ে মৈত্রী স্থাপন করতে হয়। স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য ধর্মকে তার শিকড় ভাষাকে ধরে রাখতে হয়; কারণ সেই ভাষায়, সেই টাইম পিরিয়ডের নিজস্ব প্যারাডাইমে অর্থের নিজস্বতা আছে। স্বতন্ত্র্য দ্যোতনা আছে। কিন্তু তার মানে এই না, সেই দ্যোতনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত হতে বাঁধা দিতে হবে। আদতে ধর্মকে দুই দিকেই জিহাদ করতে হয়। প্রথমত, সে যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল শাসক ও অভিজাতদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত না হয়। দ্বিতীয়ত, শ্রোতা যেন সত্যিকার সারবস্তু থেকে বঞ্চিত না হয়। ইসলামে আযানকে আরবি ভিন্ন অন্য ভাষায় নেয়ার চেষ্টা হয়নি; একথা যেমন সত্য। একইভাবে খুতবাকে শ্রোতার বোধগম্য করার স্বার্থে শ্রোতার ভাষাতেই দেবার ফিকহি নির্দেশনা এসেছে; এটাও সত্য।

 

নির্বাণের মতো কিছু পরিভাষার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলাদা হয়েছে মহাযান ও হীনযান বৌদ্ধধর্ম। ইমামত এবং খিলাফতের মতো পরিভাষার সংজ্ঞাগত ভিন্নতায় শিয়া ও সুন্নি পৃথক হয়। কমুউনিয়ন, হোলি স্পিরিট, কৌমার্যের মতো পরিভাষা নির্ধারণ করতে পৃথক হয় ক্যাথোলিক ও অর্থোডক্স। অবশ্যই রাজনীতি খুব গভীর থেকে ভূমিকা রাখে। অবশ্যই অন্যান্য অনুঘটককে অস্বীকার করা হচ্ছে না। কিন্তু ঐশ্বরিক শব্দের ব্যাখ্যাগত ভিন্নতাই ধর্মের ভেতরে নানা মত ও দলের দেয়াল হিশাবে দাঁড়ায়। ধর্ম-দর্শনের বিতর্ক তাই যেন শেষ পর্যায়ে গিয়ে পরিণত হয় ভাষাবিজ্ঞানের বিতর্কে। ব্যক্তি ভাষাকে যেভাবে অনুধাবন করে, তার ধর্মকেও সেভাবেই অনুধাবন করতে চায়। ফলে ধর্মের বিতর্ক যেমন ভাষার বিতর্ক থেকে মুক্ত না; ভাষার বিতর্কও মুক্ত হতে পারেনা ধর্মের বিতর্ক থেকে।

 

জালালুদ্দীন রুমি (১২০৭-১২৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) বলেছেন, স্রষ্টার ভাষা হলো নীরবতা। বাকি সমস্ত ভাষাই হলো অনুবাদ। কিন্তু খোদ রুমিকেও কথাটা বলার জন্য ভাষার মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে। ধর্ম এক বিশেষ শরাবের নাম। ভাষা সেখানে পেয়ালা। শরাবের সংস্পর্শে গেলে পেয়ালা নতুন বিশেষত্ব লাভ করে। অন্যদিকে শরাবকেও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠার জন্য সঠিক কোন পেয়ালায় হাজির হতে হয়। ভাষা ও ধর্মের এই বহুমাত্রিক ও গতিময় সম্পর্কই উভয়কে জীবিত রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। সেই গতিশীলতাকে পাঠ করতে অপারগ চোখ বিশেষ কোন একটা রূপকেই স্থায়ী হিসাবে কল্পনা করে তার মাঝেই নিজেকে বিলীন করে। ধার্মিক হয়ে উঠে অদ্ভূত পুলিশ। সে বুঝে উঠতে পারে না, কোরানের আরবি ভাষা যখন জিবরাইল, মিকাইল এবং ইসরাফিল বা বনি ইসরাইলকে বুঝাতে চায়, তখন নতুন শব্দ আবিষ্কার করে না। শব্দগতভাবে যে উৎস থেকে হিব্রুতে গাব্রিয়েল আসে, সেই উৎস থেকেই আরবিতে জিবরাইল আসে। কেবল পুরাতন শব্দের ভেতরে প্রবেশ করে নতুন আইডিয়া। কারণ বাইবেলে মানুষ-খোদা সম্পর্ক আর কোরানের মানুষ-খোদা সম্পর্ক একরকম থাকেনি। মানুষ এখন আরো ম্যাচিউরড। এথনিক আইডেনটিটিকে ছাপিয়ে ভাবতে পারে। আবার, প্যাগান আরবে জিন বলতে মরুভূমিতে উদ্ভ্রান্ত আত্মাকে বুঝানো হলেও কোরানের পরে জিন পায় নতুন পাটাতন। মুশরিক আমলে আল্লাহকে সম্পর্কিত করা হতো লাত, মানাত আর উজ্জার সাথে। কোরান কিন্তু ‘আল্লাহ’ নামটাকে নাই করে দেয়নি, শিরক থেকে মুক্ত করেছে। (সূরা নজম, ১৯-২৩)।

 

৪.

রাসুল দ. আঙুল দিয়ে যখন উপরে দেখিয়ে দেন, তখন আল্লাহকেই নির্দেশ করেন। অন্য আকাশ দেবতাকে না। মুসলমানরা যখন পারস্য জয় করলো, বহু শব্দ তারা পেয়েছে ডিকশনারিতে। বেহেশত, দোযখ, পুলসিরাত, ফেরেশতা, জিন্দিক, খোদা, নামাজ এবং অন্যান্য। যে উৎস থেকে নমস্তে এবং নমস্কার শব্দ এসেছে, একই সূত্র থেকে এসেছে ভারত, ইরান আর অটোম্যান মুসলমানদের ব্যবহৃত নামাজ শব্দটিও। অরিজিন শব্দ ‘নমসঃ’ নিজে হিন্দু, পারসিক, মুসলমান বা প্যাগান না। তার ভেতরে যে আইডিয়ার প্রবেশ ঘটে, তার প্রতিনিধিত্ব করে। নামাজ পড়া বলতে মুসলমানি ইবাদতকেই নির্দেশ করে। একইভাবে পারসিক জিন্দিক অর্থ ‘যে জেন্দাবেস্তার বিরোধিতা করে’ অর্থাৎ জরাথুস্ত্রবাদ বা মনিবাদ মোতাবেক বিধর্মী। কিন্তু গোটা আব্বাসীয় আর অটোম্যান আমলে জিন্দিক শব্দটাকে ইসলামি টার্ম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ইসলাম বিরোধিতা আর নাস্তিকতাকেই বুঝানো হয়েছে তখন। এইবার আরো বড় সমস্যা হলো। নাস্তিক বলতে এই মুহূর্তে ঈশ্বরে অবিশ্বাস বুঝানো হলেও ঈশ্বরের সাথে তার লেনাদেনা নেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে। তাত্ত্বিকভাবে নাস্তিক হলো যে বেদের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। বৌদ্ধ, জৈন এবং চার্বাক দর্শনকে প্রাচীন ভারতীয় নাস্তিক দর্শন বলা হয় এই কারণেই। শনিবার ইহুদিদের সাব্বাথের দিন। এ দিনের আরবি নাম ইয়াওমুস সাবত্- মূলত সেই সাব্বাথ থেকেই এসেছে। তাতে কি ইসলাম পরাজিত ও ইহুদিধর্ম বিজয়ী হয়ে গেছে? বরং এটা বলাই যৌক্তিক যে, প্রচলিত সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত ভাষা এবং শব্দকে ইসলাম প্রতিপক্ষ বানায়নি।

 

অতিবিশুদ্ধবাদের তোপে নামাজ, রোজা, বরকত, সদকাকে ভুল সাব্যস্ত করে উপহাস করা; বিপরীতে হেদায়েত হিসাবে সালাত, সাওম, বারাকাহ, সাদাকাহ শব্দের ব্যবহারে জিহাদ ঘোষণা। এটা কি আওয়ামের থেকে দূরত্ব তৈরি করে ধর্মীয়ভাবে নয়া ব্রাহ্মণ্যবাদের মনস্তত্ত্ব? নাকি ভাষার গতিশীলতা সম্পর্কে অজ্ঞতা? ধর্ম যখন অক্ষরবাদে ডুবে যায়, তখন জীবন্ত ভাষায় জন্ম নেয় মূর্তির স্থবিরতা। ইলাহকে মূর্তিতে পরিণত হতে দেখলে সবাই বুঝে। ভাষা মূর্তিতে পরিণত হলে না উপাসক বুঝে; না তার প্রতিযোগী।

 

গ্রন্থপঞ্জি:

১. The Critique of Pure Reason, Immanuel Kant, Encyclopaedia Britannica inc, Chicago,

২. গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব: অগ্রন্থিত প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনা, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০২

৩. Language, Truth and Logic; A J Ayer, Penguin Edition, 1990

৪. The Idea of Holy, Rudolf Otto, CreateSpace Independent Publishing Platform, 2017

৫. The Murderous History Of Bible Translations, Bloomsbury, 2016

৬. Sufism and Bhakti Movement: Eternal Relevance, Hamid Hussain, Manak Publications, 2007

৭. The Relationship between Language and Religion, Thesis, Belinda Marie Balraj, Surjeet Singh, Masdini Harina abd manna, Published in November in International Journal of Academic research in Business and Social Sciences, 2020

৮. Influence of religion of language use, Ph.D. Thesis by Ali Alsohaibani, November, 2017

৯. Language and Religion: Liguistic Religion or Religious Language, Thesis by Ali Rahimi,

১০. The Language of Religion, An Essay by CS Lewis,

 

2 মন্তব্য
  1. Ashraful Alam বলেছেন

    খুব ভালো লাগলো 💚.
    আর অনেক তথ্য পেলাম

    1. Mozlish বলেছেন

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না