অধুনা সমাজে কিছু মানুষ তাদের নির্ধারিত অশুভ বাক্যাবলিকে বন্দি খাঁচার মধ্যে আটকে রেখে অনর্গল বলতে চেষ্টা করে যে, ইসলাম নারীজাতিকে যথাযথ আত্মাধিকার দিতে সক্ষম হয়নি এবং ইসলামে নারীকে পুরুষের অর্ধেক বানিয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- সত্যতা এবং ইতিহাস অন্য কিছু বলে। প্রথমে বলে রাখি, ইসলাম মানবতার জন্য যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা এবং অধিকারের শুভ বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যেখান থেকে নারীকে না কোনোরকম বঞ্চিত রাখা হয়েছে, না কোনোরকম অবজ্ঞা করা হয়েছে বরং সম্মানের সুউচ্চ শিখরে উপনীত করেছে।
অপবাদ প্রদানকারী ব্যক্তিরা কুরআনের একটি আয়াতকে এই বিষয়ে উপস্থাপন করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন, “একজন পুরুষের অংশ দুইজন মহিলার অংশের সমান।”১ আপনার কাছে বোধহয় যথাযথ মনে হচ্ছে না, তাই না? আসলে সত্যি বলতে, যে কেউ বিজলির আলোকরশ্মিতে চমকে উঠবে। বিশ্লেষণ ব্যাতিরেকে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বোকামির কাজ; ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আয়াতটি উত্তরাধিকার সম্পর্কিত। আর ইসলামের উত্তরাধিকার সূত্রের আইনকে যারা সাধারণ দৃষ্টি দিয়ে দেখে, কোন গভীরতা এবং বিশ্লেষণ করে দেখে না, তাদের এই ভুল হয়। এবং বলে দেয় যে , ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়ে কম’। এই কথাটি বিজ্ঞানময় কুরআনের যথাযথ প্রজ্ঞার সহিত বোধগম্য না করার ফল। যদিওবা আয়াত থেকে জানতে পারি ‘একজন পুরুষের অংশ দুইজন মহিলার অংশের সমান’, তা সত্ত্বেও ইসলামের উত্তরাধিকারস্বত্বের আইনকে গভীর দৃষ্টিতে পর্যালাচনা করলে এই ভুলটি তিরোহিত হবে। ইসলামের উত্তরাধিকার স্বত্তের আইন নারীর অধিকারকে অর্ধেক কিংবা হালকা নয় বরং সুন্দর দাম্পত্য এবং উত্তম জীবন পরিচালনা করার উদ্দেশ্য আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের উত্তারাধিকার স্বত্ত্বের আইন নারীর পবিত্রতা এবং মর্যাদার রক্ষাকবচ বলা যায়। নিন্মোক্ত তাৎপর্যসমূহ এই আইনে নিহিত রয়েছে।
উপরে উল্লিখিত আয়াতের শব্দের মধ্যে গভীর দৃষ্টিপাতের ফলে বণ্টনের মৌলিক মাপকাঠিকে স্পষ্ট করে দেয়। এখানে পুরুষ-মহিলার উত্তরাধিকার অংশ বর্ণনা করতে, নারীর অংশকে একমাত্র সাব্যস্থ করা হয়েছে। একজন পুরুষের অংশ দুই মহিলার অংশের সমান। এটা বলা হয়নি যে, একজন মহিলার অংশ পুরুষের অর্ধেক অংশের সমান। বরং উত্তারাধিকার স্বত্ব বণ্টনের শৃঙ্খলার মধ্যে নারীর অংশকে ভিত্তি করা হয়েছে । অতঃপর, সমস্ত অংশকে নির্দিষ্ট করার জন্য সেটাকে একমাত্র করা হয়েছে। বস্তুত স্বত্ব বন্টনের সকল আইন মহিলার অংশের চারপাশেই ঘুরছে, যেটা প্রকৃতপক্ষে নারীর সম্মান আর মর্যাদার প্রকাশক। উত্তরাধিকার স্বত্বের অংশ নির্ধারণ লিঙ্গভেদে হয় না। আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে নারীর সকল প্রয়োজনের তত্ত্বাবধায়ক করেছেন, আর নারীকে সেই দায়দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছেন। নারীর জন্য রোজগার ও জীবিকার ক্ষেত্র থেকে সম্ভাব্য সকল উপকারিতা অর্জন করার ওপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, বরং নারী যদি উপার্জনকারীও হয়, তবুও তত্ত্বাবধানের দায়দায়িত্ব তার স্বামীর উপরই বর্তাবে। আর নারী নিজের রোজগার বিশেষ অধিকার হিসাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। আর সে ঘরোয়া প্রয়োজন মেটানোর জন্য খরচ করতে চাইলে তার এই ভূমিকা বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা এটা তার কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। পুরুষের আয় নারীর উপার্জনের চেয়ে কম হলেও তত্ত্বাবধানের দায়দায়িত্ব পুরুষের উপরই বর্তাবে। অভ্যন্তরীণ অবস্থার দায়দায়িত্বের উপযোগিতার প্রতি দৃষ্টি রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সুদৃঢ়, ন্যায়পরায়ণ এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন ছিল, যাতে পুরুষদেরকে উত্তরাধিকার স্বত্ত্বের মধ্যে অধিক ভাগ দেয়া, যাতে সে নিজের ওপর প্রত্যাবর্তনকারী সকল পারিবারিক দায়দায়িত্ব থেকে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে পালন করে মর্যাদার উপর সমাসীন হতে পারে। বস্তুতঃ নারীর উত্তরাধিকার স্বত্বের অধিকার পুরুষের চেয়ে অর্ধেক করা হয়নি, বরং পুরুষের উত্তরাধিকার স্বত্বের অধিকার অতিরিক্ত দায়িত্বের কারণে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এইভাবে পুরুষ এবং মহিলার দাম্পত্য, সামাজিক এবং পারিবারিক দায়দায়িত্ব আদায় করার মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যেহেতু একজন নারী বিবাহে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সকল দায়দায়িত্ব এবং ভরণ-পোষণ প্রথমে তার স্বামীর উপর এবং তারপর তার পরিবারের উপর বর্তায়, তাই স্বামীকে অর্থাৎ, ছেলেকে যদি উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী থেকে একটু বেশি না দেওয়া হয় তাহলে তা ছেলের উপর জুলুম হবে, ব্যালেন্স রক্ষা হবে না। কারণ স্বামী যদি কোনো কারণে আয় করতে অক্ষম হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে তার অতিরিক্ত উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে তার স্ত্রীর চাহিদা ও অধিকার মিটানো সম্ভব হবে। কারণ তার সম্পদের উপর স্ত্রীর কৃতিত্ব বৈধ।
এছাড়াও আশ্চর্যের দাবিদার হলো, ইসলাম এখানে থেমে থাকেনি বরং নারীদেরকে আরো বহুদিক থেকে উত্তরাধিকার পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দুইভাগের একভাগ তো হলো পিতার দিক থেকে যা উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও নারীরা আরো বহুদিক থেকে উত্তরাধিকার পাবে। যেমনঃ- যদি কোনো নারীর ভাই না থাকে, তাহলে তিনি (একা হলে) পিতার ত্যাজ্য সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক পাবেন। আর যদি তারা দুই বোন বা ততধিক হন এবং কোনো ভাই না থাকে তাহলে তারা তাদের পিতা/মাতার সমুদয় সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবেন। যদি এক বোন এবং এক ভাই হয় তাহলে একজন ভাইয়ের অংশের অর্ধেক পাবেন একজন বোন। অর্থাৎ, যদি কেউ এমতাবস্থায় মারা যায় যে তার এক পুত্র ও এক কন্যা (আর কোনো উত্তরাধিকারী নেই)। তাহলে সমুদয় সম্পত্তি তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবে পুত্র আর এক ভাগ পাবে কন্যা। এক পুত্র ও দুই কন্যা থাকলে সমুদয় সম্পত্তি চার ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবেন পুত্র। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন দুই কন্যা (প্রত্যেক কন্যা এক ভাগ করে)। পবিত্র কোরআনুল কারিমে এসেছে, “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তাহলে তাদের জন্যে ওই ত্যাজ্য মালের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি (কন্যা) একজনই হয় তাহলে সে জন্য অর্ধেক।”২
স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর অধিকার। খ্রিষ্টান ধর্মে পিতার মৃত্যুর পর যদি তার কোনো পুত্র সন্তান জীবিত থাকে, তবে কন্যা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কিছুই পাবে না। এ বিষয়টি প্রচলিত বাইবেলে উল্লেখ আছে। পুত্র সন্তান দু’জন হলে বড় পুত্র পাবে ছোটজনের দিগুণ। পুত্র না থাকলে সমস্ত সম্পত্তি কন্যার। কন্যা না থাকলে (মৃতের) ভাইয়ের। ভাই না থাকলে নিকটাত্মীয়র। তবুও মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী কিছুই পাবে না। অথচ ইসলাম স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার খুব মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যদি কারো স্বামীর ইন্তিকাল হয় আর সে স্বামীর কোনো সন্তাননা থাকে তাহলে স্বামীর সমূদয় সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (আট ভাগের এক ভাগ)। পবিত্র কোরআনুল কারিমে এসেছে, “স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ।”৩ সন্তানদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে মায়ের অধিকার। মা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তানের ইন্তিকাল হলে সন্তানের যদি কোনো সন্তান-সন্ততি না থাকে তাহলে সেই সন্তানের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবেন মা। আর যদি মৃত সন্তানের কোনো সন্তান-সন্ততি থাকে তাহলে মা সেই (মৃত) সন্তানের সম্পত্তির একশষ্টমাংশ (ছয় ভাগে এক ভাগ) পাবেন। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, “মৃতের কোনো পুত্র থাকলে পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য (সন্তানের) ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ।”৪ এভাবেই ইসলাম সম্পত্তিতে ও উত্তরাধিকারে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাহলে কিভাবে বলা যেতে পারে যে, ইসলাম নারীজাতিকে অবহেলা করেছে?
এইবার আসুন, একধাপ এগিয়ে যাই। ইতিহাসের পাতাগুলো একটু উল্টিয়ে দেখি, ইসলাম নারী জাতিকে যথাযথ সম্মান ও অধিকার দিতে সক্ষম হয়েছে কি না? ইসলাম নারীজাতিকে অন্যান্য সকল ধর্ম থেকে ঊর্ধ্বে সম্মান, আত্মমর্যাদা, আত্মাধিকার দিয়ে আচ্ছাদিত করেছে। ইতিহাসে এমন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডও হতো যার কারণে নারীজাতি একসময় বিলুপ্তি হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সর্বপ্রথম ইসলাম এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। আরবের প্রাক-ইসলামি যুগে কন্যা সন্তানকে দারিদ্র্যতা ও অসম্মানের ভয়ে জীবিত পুঁতে ফেলা হতো ও প্রাচীন এথেন্সে কন্যাসন্তান জন্ম দিলে তাকে বন-জঙ্গলে ফেলে রেখে আসতো পাষাণ বাবা। এ উদ্দেশ্য যে, সেখানেই যেন অনাহারে কিংবা বন্যপশুর আক্রমণে মারা যায় নিষ্পাপ মেয়েটি এবং রোমান দার্শনিক প্লিনি দ্য এল্ডার লিখেছেন, “প্রাচীন মিশরে ঋতুচক্র চলাকালে নারীরা আলাদা একটি স্থানে গিয়ে থাকতে হতো, সবদিক দিয়ে তারা অবহেলার পাত্র ছিল শুধু। বিশ শতকের চল্লিশের দশক পর্যন্ত চীনে নববধূকে অপহরণ করা হতো এবং জাপানেও এমনটা হতো এবং প্রাচীন গ্রিসে, রোমে এবং স্পার্টাতে আরো অসংখ্য জায়গায়।” সম্মান এবং নারী দুইটি যেন ভিন্ন মেরুর বস্তু ছিল। কুরআন ও হাদিসে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
এবং এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড না করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। সভ্যতার দাবিদার ইংল্যান্ডে ডাইনি বলে নারীকে পুড়িয়ে মারার আইন রদ করা হয় ১৭৩৬ সালে। যারা আজ সারা বিশ্বের প্রগতি ও আধুনিকতার নিয়ে চিৎকাররত; সেই ব্রিটেনে নারীর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। Married Womens Property Act : ১৮৮২ –১৮৮২ –এর আগ পর্যন্ত সে দেশের আইনে নারীদের সম্পত্তি ছিল অবৈধ। বিয়ের আগেও যদি কোনো নারী চাকরি বা অন্য কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করত তাহলে তার বিয়ে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যেত তার স্বামী। জার্মানী নারীদের ১৯০০ সাল, সুইস নারীদের ১৯০৭, অষ্ট্রেলীয় নারীদের ১৯১৯ সালের আগে ছিল না কোনো উত্তরাধিকার সম্পত্তি। আজও হিন্দু ধর্মে নারীরা উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত। অথচ ইসলাম এসব অধিকার বহু আগে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ইংল্যান্ডে নারীর মতামত দেওয়ার অধিকার আন্দোলনের সূচনা হয় সবে মাত্র ১৮৯৭ সালে। Millicent fawcett যখন ‘National Union of women’s suffrage’ বাস্তবায়ন করেন।
অন্যদিকে, কুরআনুল কারিমে সুরা বাকারার ২৮২ নং আয়াতে এবং অসংখ্য হাদীসেও ১৫০০ বছর আগেই উপর্যুক্ত অধিকারের অনুমোদন দেওয়া হয়। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে (যারা মুহাম্মদ দ. এর প্রণীত ধর্ম ব্যবস্থার উপর অবিচল ছিলেন) রাষ্ট্রীয় সভাতে মহিলাদের পরামর্শ নিতেন, যার প্রমাণ মিলে ইমাম সূয়ুতির তারিখে খুলাফাতে। খুলাফায়ে রাশেদিনের আমলে মহিলাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারও প্রধান করা হয়। অথচ, আধুনিক সভ্যতার দাবীদার রাষ্ট্রগুলো অসংখ্য আন্দোলনের পর তারা তাদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয় ১৮০০ সালের পর থেকে। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে রাষ্ট্রবস্থাপনার দায়িত্বে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে মহিলাদের নিয়োগ দেওয়া হত। এতটুকুতেও ইতি ঘটেনি, এমনকি সংসদ পার্লামেন্টে আসন নেওয়ার অধিকারও দেওয়া হয়েছে। কুরআনের আত-তাওবাহ ৯-৭১ আয়াতে মুসলিম সমাজের দায়দায়িত্বের ভার নারী-পুরুষকে সমানভাবে প্রদান করা হয়েছে। তারপরও বর্তমান বিশ্বে নারীদের সমতা ও জয়জয়কার দেখে এটা ভেবে বসবেন না যে, এসব অধিকার আদায়ের খোলশটা বিগত একশো বছরের চলমান নারী অধিকার আন্দোলন থেকে প্রথম খশে পড়েছে বা আন্দোলনের পর থেকে এই প্রথম অধিকারগুলো উন্মোচিত হয়েছে। এটা একদম ভুল; কারণ এসব অধিকারগুলো মুহাম্মদ (দ.) ১৫০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি নারীদের অধিকারে কোনো কমতি রাখেননি। শুধু উত্তরাধিকারের দিক দিয়েই নয় বরং সবদিক থেকে নারীকে সম্মানের পাত্র বানিয়েছেন।
অধিকার দুইধরনের, একটি সত্তাগত অন্যটি সত্তা সম্পর্কিত অধিকার। পশ্চিমা বিশ্বে সত্তা সম্পর্কিত অধিকারে আদায়ে মুটামুটি সচেতন হলেও অপরদিকে সত্তাগত অধিকারে অনেকটাই অসচেতন। যেমনঃ- সত্তাগত অধিকারের সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার হলো ‘আত্মসম্মান’। নারীর কাছে এটা খুব গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে সভ্যতা ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নারীরা আত্মসম্মানকে বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছে না। অনেকে এই বিষয়ে দৃষ্টিপাতও করে না, দেখার অভিনয় করছে কেবল।
নারী স্বাভাবিকভাবেই লজ্জাশীল হয় এবং নারীর কাছে নিজের আত্মসম্মানের চেয়ে বড় কিছুই নেই। আর আত্মসম্মান নিজ সতীত্বকে ঘিরেই হয়ে থাকে। তারা নারীকে সবজায়গায় উপস্থাপন করছে সতীত্বতা ব্যাতিরেকে। লুণ্ঠিত হচ্ছে সতীত্ব, নারীজাতিকে ব্যবসায়িক পণ্যের মতো করা হয়েছে। নারীকে সম্মানবিহীন অধিকার দেওয়া হয়েছে, যার ফলে দেওয়া না দেওয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য পড়ে না।
তাদের সভ্যতা অনুযায়ী ইচ্ছে করলেই সতীত্বতা ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কারণ পরিবেশেই এমন তৈরি করেছে তারা। এসব কি তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না? অন্যদিকে ইসলাম তাদেরকে সব অধিকার দিয়েছে আর সাথে সতীত্ব ধরে রাখতে পর্দার ব্যবস্থা করেছে। যেমনিভাবে আমাদের ঘরে গুরুত্বপূর্ণ এবং দামি জিনিসকে কাপড়ে মুড়িয়ে আবৃত করে রাখি, তেমনিভাবে মূল্যবান নারীকে পর্দা দিয়ে আবৃত রেখে সকল অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এতে এটা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম নারীকে শুধু অধিকারেই দেয়নি বরং সম্মানের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু মানব সমাজ নারী পুরুষের একটি সংমিশ্রিত রূপ। সেহেতু ইসলামে লিঙ্গভেদাভেদহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি বাণী দিয়ে ইতি টানছি। যার মাধ্যমে আপনাদের ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ( দ.) ইরশাদ করছেন, “যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন-পালন করেছে, পুত্র সন্তানকে কন্যাদের ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাদেরকে উত্তম আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তাদেরকে বিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে, সে জান্নাত লাভ করবে।”৫ এখানে ইসলাম কন্যা সন্তানকে অভিহিত করেছে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। এভাবে প্রত্যেক কিছুতে নারীকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করেছে, যাতে সম্মান ও অধিকার অটুট থাকে। ইসলাম নারীকে সমাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল প্রকার অধিকার দিয়েছে। সুতরাং, এটা আর বলার উপেক্ষা রাখে না যে, একমাত্র ইসলাম দিকনির্দেশিত বা নির্ধারিত অধিকারই পারে নর-নারীকে নিজের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে।
তথ্যসূত্র:
১. সুরা নিসা : ১৭৬
২. সুরা নিসা : ১১
৩. সুরা নিসা : ১২
৪. সুরা নিসা : ১১
৫. আবু দাউদ : ৫১৪৯