নেটো ভুক্ত একমাত্র মুসলিম দেশ তুরস্ক। ভৌগলিক অবস্থান, সামরিক শক্তি ও মুসলিম বিশ্বের কণ্ঠ হিসেবে যার নাম গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বারবার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (GFP) সূত্রমতে তুরস্ক পৃথিবীর এগারতম সামরিক শক্তির দেশ এবং নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই যার অবস্থান।
তুরস্কের ইতিহাস অনেক পুরনো। আরতুগ্রুল গাজির হাত ধরে উঠে আসা এক যোদ্ধা জাতির নাম তুরস্ক। ওসমানিয় ৬শ’ বছরের শাসন মুসলিম ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। ১২৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের আগ পর্যন্ত টিকেছিল গৌরবময় ইসলামি উসমানীয় সালতানাত। ইসলামের প্রায় সব পবিত্রস্থান ছিল এই সালতানাতের অধীনে এমনকি মক্কা, মদিনা ও বাইতুল মুকাদ্দাস। প্রথম মহাযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যোগ দিলে তাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে এবং মিত্র শক্তি তুরস্কের সব উপনিবেশ ভাগাভাগি করে নিয়ে তুরস্কের অস্তিত্ব সঙ্কটে ফেলে দেয়। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী তুরস্ককে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কামাল পাশার নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে হয়। ১৯২৩ সালে কামাল আতাতুর্ক এক ঘোষণার মাধ্যমে তুরস্কে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কামাল পাশা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তুরস্ককে একটি আধুনিক ইউরোপীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তিনি সেকুলারিজমকে রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে সংবিধানে স্থান দেন এবং সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। ১৯৩৮ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সে প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
২০০৩ সালে এরদোগানের নেতৃত্বে ইসলামি ভাবধারায় উজ্জীবিত ‘জাস্টিস এন্ড ডেভলেপমেন্ট পার্টি’ ক্ষমতায় আসে এবং কোরানে হাফেজ এরদোগান প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তুরস্কের প্রভাব, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে মনযোগী হয়ে ওঠেন। তার সঠিক ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে তুরস্কের বৈশ্বিক অবস্থান শক্ত হচ্ছে। ওসমানিয় খলিফাদের মত তিনি নির্যাতিত সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর নীতি গ্রহণ করেছেন। নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করেন এবং সর্বময় ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত হয়। পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কখনো আফ্রিন, কখনো ইদলিবে অভিযান পরিচালনা করেন। কখনো খোদ যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে বসেন। রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করার মত দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন কখনো। পশ্চিমা অনেক বিশ্লেষকের মতে, এরদোগান ওসমানিয় সুলতানদের মত ক্ষমতা ও সামরিক প্রভাব বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন।
তুরস্কের সিরিয়া অভিযান : পশ্চিমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ
ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কের ভূমি নিয়ে একটি কুর্দি রাষ্ট্রের স্বপ্ন কুর্দি নেতা ও ইসরাইলের বহু পুরানো। ইসরাইল চায় একটি কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের মধ্যপ্রাচ্যে একজন নতুন মিত্র মিলবে। যাদের ভাবধারা ও ধর্মবিশ্বাস হবে ইসরাইলের মত। পশ্চিমারাও চেয়েছিল এমন একটি রাষ্ট্র যা হবে ইসরাইলের মত মধ্যপ্রাচ্যে আরেক ক্রিয়ানক। তুরস্কের চাপে পশ্চিমারা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পি.কে.কে) সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করে। কিন্তু তার একটি সশস্ত্র শাখা ওয়াই.পি.জের প্রতি পশ্চিমা ও ইসরাইলের ছিল সামরিক ও কূটনীতিক সমর্থন। ওয়াই.পি.জে ব্যবহৃত প্রায় সব অস্ত্র মার্কিন বা ইসরাইলের তৈরি। আফ্রিন, আলেপ্পো ছিল কুর্দি সশস্ত্র যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ২০ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মার্কিন ও পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তুরস্ক আফ্রিনে ‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ শুরু করে। মাত্র দুমাস চারদিনের যুদ্ধে ওয়াই.পি.জে আফ্রিনে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর এরদোগান আলেপ্পো অভিযানের ঘোষণা দেন। তখনো সেখানে কুর্দিদের সমর্থনে মার্কিন সৈন্য উপস্থিতি বজায় রেখেছিল। এরদোগান আলেপ্পো থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান নতুবা মার্কিন সৈন্যদের লক্ষবস্তুতে পরিণত করার ঘোষণা দেন। এরদোগানের আহবানে সারা দিয়ে ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নিলে ০৯ অক্টোবর ২০১৯ তুর্কি সৈন্যরা ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরু করে। মাত্র আটদিনের যুদ্ধে তুরস্ক ৪৮২০ বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে যার মধ্যে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ‘রাস আল আইন’, তেলয়াবিয়া, মানবিজ রয়েছে।
এতদিন যে অঞ্চলে মার্কিন সৈন্যদের পাহাড়ায় কুর্দিরা দখল বজায় রেখেছিল এবং একটি নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছিল। তুরস্কের অভিযানের মুখে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে তারা হতাশ ও স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ অভিযান বন্ধে পশ্চিমাদের তোরজোড় কম ছিল না, কিন্তু এরদোগানের সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যে আরেক ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পশ্চিমা স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেল।
লিবিয়া : তুরস্কের সামরিক শক্তির আরেক পরীক্ষাগার
২০১১ সালে নেটো হামলায় গাদ্দাফির পতনের পর থেকে তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে বিবাধমান পক্ষগুলো সহিংসতায় জড়িয়ে পরেছে। দেশের শাসনভার মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে জাতিসংঘ স্বীকৃত জি.এন.এ সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে ত্রিপলি অন্যদিকে খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বেনগাজি সহ পুরো পশ্চিমাঞ্চল। দুপক্ষের রয়েছে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন। তুরস্ক, ইটালি, কাতার সমর্থন দিচ্ছে জি এন এ সরকারকে। খলিফা হাফতারকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া, সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর এবং গোপনে সমর্থন দিচ্ছে ফ্রান্স। অতিসম্প্রতি গ্রিস, ইসরায়েল ও মিশর ভূমধ্যসাগরে তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন সংক্রান্ত একটি চুক্তি সাক্ষর করে, যে পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে তেল-গ্যাস সরবরাহ করার কথা রয়েছে। এ অঞ্চলে তুরস্কের স্বার্থ রক্ষায় লিবিয়ার সাথে একটি চুক্তি প্রয়োজন হয় তুরস্কের, যাতে করে এই প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করা যায় অথবা তুরস্কের অনুমতি প্রয়োজন হয়। সে লক্ষে ২০১৯ সালে তুরস্ক লিবিয়ার সাথে একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষর করে এবং জানুয়ারি ২০২০সালে লিবিয়ায় প্রযুক্তি সহযোগিতার নামে সেখানে সৈন্য মোতায়েন করে। এরপরেই জি এন এ বাহিনী ত্রিপলির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় এবং সির্তে দখলের জন্য এগিয়ে যায়। মিসর আগে থেকেই সির্তে শহরকে রেডলাইন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। মিশর সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে, যাতে মিশরের সৈন্যরা দেশের বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে পারে। এর মধ্যে তুরস্কের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে, তুর্কি যার জন্য মিসরকে দায়ী করেছে। এখন প্রশ্ন হল, তুরস্ক ও মিসরের মধ্যে যুদ্ধ হলে কে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার এর সূত্রমতে, মিশরের অবস্থান অষ্টম অপরদিকে তুরস্কের অবস্থান এগারতম। তবে তুর্কি বাহিনী মিশরের বাহিনী থেকে বেশি কার্যকর বলে ননে হয়। মিসর সিনাইয়ের বিদ্রোহ সাত বছরেও দমন করতে পারেনি। অপরদিকে তুরস্ক পিকেকে, ওয়াই পি জে এবং রুশ ও ইরান সমর্থীত আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। তুরস্কের ড্রোন হামলা ঠেকাতে সিরিয়া রাশিয়ান আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পানসির-২ মোতায়েন করেছিল কিন্তু তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি টি বি-২ ড্রোন তা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। তাই মিশরের সাথে যেকোন যুদ্ধে জয় তুরস্কের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ভূমধ্যসাগরকেন্দ্রিক তুরস্কের ভবিষ্যৎ ও শঙ্কা
ভূমধ্যসাগর, এজিয়ান সাগর ও কৃষ্ণসাগর বেষ্টিত তুরস্কের যেমন রয়েছে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ তেমনি রয়েছে শঙ্কা। পূর্ব-ভূমধ্যসাগর তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ হওয়ায় এর মালিকানা নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব। অতিসম্প্রতি তুরস্কের জাহাজ গ্রিসের কাছে একটি দ্বীপে তেল-গ্যাস সন্ধান করতে গেলে গ্রিসের নৌবাহিনী বাধা দেয়। আয়া সোফিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিসের মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি তুরস্ক। সম্প্রতি গ্রিসের আহবানে সারা দিয়ে ভূমধ্যসাগরে রণতরী মোতায়েন করে ফ্রান্স।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে গ্রিস, প্রয়োজনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের থামানো হবে’। এজিয়ান সাগরের তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকা নিজেদের বলে দাবী করেছে গ্রিস, যাতে সমর্থন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার হুশিয়ার করে বলেছে, ‘তুরস্কের স্থলবেষ্টিত যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তুরস্ক তা ছিঁড়ে ফেলেছে’।
ভূমধ্যসাগরে শুধু তুরস্ক, গ্রিস, ইটালি, ফ্রান্স, ব্রিটেন নয়, জোড়ালো উপস্থিতি বজায় রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। রাশিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশটি ফ্রিগেট মোতায়েন রয়েছে ভূমধ্যসাগরে। অন্য দিকে রাশিয়া সিরিয়া যুদ্ধের সময় থেকে ভূমধ্যসাগরে তাদের উপস্থিতি জোরদার করেছে। তারা সেখানে নৌশক্তি বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে গঠন করে ‘মেডিটেরিয়ান নেভাল ফোর্স’, যার আওতায় দুটি ক্রুজ মিসাইল সজ্জিত সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। তুরস্ক চায় উসমানীয় আমলে ভূমধ্যসাগর, এজিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরে তাদের যে প্রভাব ছিল তা ফিরিয়ে আনতে। বিশ্বশক্তিকে চ্যালেঞ্জ, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার জন্য তুরস্কের বিমান ও নৌশক্তি বৃদ্ধির বিকল্প নেই তা বুঝতে দেরি করেননি এরদোগান। ক্ষমতায় এসেই তিনি বিমান ও নৌশক্তি বৃদ্ধি করতে মনযোগী হন। নৌশক্তি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মিলগেইম এর আওতায় ছয়টি করে করভেট, ফ্রিগেট ও সাবমেরিন নির্মাণ শুরু করে। করভেটের কাজ হবে সাবমেরিন শনাক্ত করে ধ্বংস করা। ফ্রিগেটের মাধ্যমে আক্রমণ পরিচালনা করা হবে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতি বছর একটি করে সাবমেরিন তুরস্কের নৌবাহিনী সার্ভিসে আনবে। যেগুলো T-214 Air Independent Propulsion ধাচের, যার প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছে জার্মানির থাইসেন ক্রপ মেরিন সিস্টেম। সাবমেরিনগুলোতে থাকবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টর্পেডো ও গাইডেড মিসাইল যা দিয়ে সফলভাবে সাগর ও স্থলে হামলা চালানো যাবে।
অন্যদিকে তুরস্কের বিমানবাহী রণতরী টি সি জি-আনাদুলু এ বছরেই সার্ভিসে আসছে। এর দৈর্ঘ্য ২৩১ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার। রণতরীটি কোন বেইজ সাপোর্ট ছাড়াই পুরো একটি ব্যটিলিয়ন পরিচালনা করতে পারবে। রণতরিটি ২৭ হাজার টন বহন করতে সক্ষম, এর মাধ্যমে বিমান, হেলিকপ্টার ও মনুষ্যবিহীন ড্রোন (UAV) উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে তুরস্ক অভিজাত নৌশক্তিতে পরিণত হবে।
অপরদিকে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তুরস্ক বিশাল এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তুরস্ক রাশিয়ার তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্রয় করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের এফ-৩৫প্রগ্রাম থেকে তুরস্ককে বাদ দিয়ে দেয়। যার আওতায় একশটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাখ্যাত হয়েই তুরস্ক ৫০বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির ঘোষণা দেয়, এর নাম দেয়া হয় টি এফ-এক্স। ২০১৭ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তুরস্ক সফরকালে ব্রিটিশ বি ই সিস্টেমের সাথে তুরস্কের টি আই এ সাথে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সাক্ষর হয়, যার আওতায় তুরস্ককে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরিতে সহযোগিতা করবে বি ই সিস্টেম। যার নকশার দায়িত্ব দেয়া হয় বিখ্যাত রোলস রয়েস সংস্থাকে। টি এফ-এক্স ভবিষ্যতে এফ-১৬ এর স্থান দখল করবে। যার সংখ্যা ২৪৫টি।
আকাশযুদ্ধের কথা বলতে গেলে তুর্কি ড্রোনের কথা বাদ দেয়া যায় না। মনুষ্যবিহীন ড্রোন উন্নয়নে তুরস্কের অবাক করা সাফল্য বিশ্বশক্তিগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। পৃথিবীর অন্যতম ড্রোন সুপার পাওয়ার তুরস্ক। বিশ্বের কোন দেশের এত ব্যপক পরিসরে ড্রোন যুদ্ধের ইতিহাস নেই যা তুরস্ক সিরিয়ার ইদলিবে পরিচালনা করেছে। ইদলিবে রাশিয়া ও ইরান সমর্থীত আসাদ বাহিনী পর্যুদস্ত হয় তুরস্কের ড্রোন হামলায়। তুরস্কের ড্রোনের নিখুঁত লক্ষ মার্কিন ও ইসরাইলের ড্রোনকে হার মানিয়েছে। তুর্কি ড্রোনের আরেকটি দিক হল, ড্রোনে ব্যবহৃত সকল অস্ত্র তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এবং নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এগুলো পরিচালনা করা হয়। তুরস্কের ছয় ধরনের ড্রোন থাকলেও ইদলিবে সফলভাবে ব্যবহৃত দুটি ড্রোন হল, এরদোগানের জামাতা নির্মিত বায়রাক্তার টি বি-২ ড্রোন ও আনকা। আরো আশার কথা হল সম্প্রতি তুরস্ক আরো আধুনিক দুটি ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করেছে যে এ দুটি ড্রোন সার্ভিসে এলে তুরস্ক হবে আধুনিক ড্রোন সুপার পাওয়ার।
আধুনিক যুদ্ধের আরেকটি অন্যতম হাতিয়ার মিসাইল সিস্টেম। তুরস্ক নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছে গগদোয়ান ও গজদোয়ান নামক স্বল্প ও দূরপাল্লার এয়ার টু এয়ার মিসাইল(AAM)। আরো উদ্ভাবন করেছে প্রথম মেরিটাইম মিসাইল হিসার-এ এবং আত্মাকা । তাদের রয়েছে শক্তিশালী সোম নামক জি পি এস নিয়ন্ত্রিত গাইডেড ক্রুজ মিসাইল।
তুরস্ক তার জলসীমা রক্ষা, প্রকৃতিক সম্পদ আহরণ, সর্বোপরি তার অস্তিত্ব ও প্রভাব টিকিয়ে রাখতে এবং বিশ্বশক্তির সাথে পাল্লা দিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। এরদোগানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তুরস্কের অবস্থান সুসংহত করতে তিনি কখনো পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হয়েছেন, কখনো রাশিয়ার। তুরস্কের ভবিষ্যৎ সংঘাত হতে পারে ভূমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরকে কেন্দ্র করে গ্রিস, সাইপ্রাস, ফ্রান্স, ইসরাইল ও মিশরের সাথে। যেকোনো যুদ্ধে পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন পাবে না এটা বুঝেই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে তুরস্ক এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর রাশিয়ার প্রয়োজন তুরস্ককে, কারন রাশিয়াকে ভূমধ্যসাগরে বসফরাস প্রণালি অতিক্রম করে যেতে হয়। যা যে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তুরস্ক বন্ধ করে দিতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, তুরস্ক কি পারবে তাদের সামরিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করতে নাকি মাঝপথে রুদ্ধ হবে উচ্চাভিলাষী স্রোত! এজন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে দশকের পর দশক।